ঢাকা,শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে এনজিওদের পোয়াবারো

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

রোহিঙ্গারা শিক্ষা এবং সচেতনতার দিক থেকে একেবারে পিছিয়ে পড়া একটি জাতি। তাদেরকে ব্রেইন ওয়াশ করা অতটা কঠিন নয়। সেই সুযোগটাই নিচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে কাজ করা এনজিও সংস্থা গুলো। নিজেদের সেবার নামে ব্যবসা ‘জিইয়ে’ রাখতে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে (মিয়ানমারে) ফেরত না যেতে উৎসাহিত করছে।
এমন অভিযোগ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটি ও স্থানীয় সচেতন মানুষের। এই অবস্থা চলতে থাকলে বাংলাদেশকে ‘রোহিঙ্গা’ অভিশাপ বয়ে বেড়াতে হবে বলে জানিয়েছেন তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়নে দেশী-বিদেশী ১৫০টিরও বেশি এনজিও সংস্থা কর্মকান্ড চালাচ্ছে। তৎমধ্যে বেশ কিছু এনজিও সংস্থার অপতৎপরতা খুবই আপত্তিকর। এসব এনজিও’র কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে আসার ইন্দন দিয়েছে এবং এখন ফেরত না যেতে উৎসাহিত করছে এমন অভিযোগও আছে।
অভিযোগ আছে জাতিসংঘের দাতা সংস্থা থেকে শুরু করে এমন কোন এনজিও নেই যারা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায়। এনজিও গুলো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত না যেতে উৎসাহিত করছে।
একটি এনজিওতে কর্মরত এক ব্যক্তি (নাম প্রকাশ না করার শর্তে) নিজের অভিজ্ঞতা থেকে জানান, এনজিও গুলো রোহিঙ্গাদের না যাওয়ার বিষয়ে বেশি উৎসাহিত করে। তাদেরকে (রোহিঙ্গা) কখনোই বুঝায় না যে, এক সময় তাদেরকে স্বদেশে ফেরত যেতে হবে। স্ব-স্ব এনজিও’র উচ্চ পর্যায়ের নিদের্শনা মানতে গিয়ে স্থানীয় যারা চাকরিতে আছে, তারাও এ অপতৎপরতায় লিপ্ত হতে বাধ্য হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, আইনত রোহিঙ্গারা কাজ করার অধিকার না রাখলেও ভলান্টিয়ার বানিয়ে তাদেরকে এনজিও’র চাকরিতে নিচ্ছে। এরফলে রোহিঙ্গারা আর্থিকভাবে সামর্থ্যবান হয়ে যাচ্ছে। তারা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ জীবন যাপন করতে সক্ষম হচ্ছে। এরফলে স্বদেশে ফেরত যাওয়ার মানসিকতা লোপ পাচ্ছে। এটি আইনের লঙ্গন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, দেশী-বিদেশী এনজিওদের অপতৎপরতা ও পর্দার আড়ালে যে সব কর্মকান্ড চালাচ্ছে তা খুবই উদ্বেগ জনক। তাদের কর্মকান্ড নজরদারি সহ মনিটরিং করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, সরকার যতই চেষ্টা করুক না কেন, এনজিও সংস্থা গুলো চাচ্ছে না তারা স্বদেশে ফেরত যাক। এমনকি ইউএনএইচসিআরের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ অহরহ রয়েছে। কারণ রোহিঙ্গারা চলে গেলে তাদের (এনজিও) ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ব্যবসা চালু রাখার জন্য তারা চাইছে এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদি হউক।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান বলেন, এনজিও সংস্থা গুলোর উচিত তাদেরকে (রোহিঙ্গা) মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার বিষয়ে এখন থেকে সচেতন করা। কারণ প্রত্যাবাসন যখন শুরু হবে, তখন যেন কোন সমস্যার মধ্যে পড়তে না হয়। কিন্তু শোনা যায়, এনজিও সংস্থা গুলো সচেতন করার বিপরীতে না যেতে উৎসাহিত করছে বেশি। এটা এনজিও সংস্থার কাছ থেকে মোটেও কাম্য নয়। কারণ এই সমস্যা আমরা দীর্ঘমেয়াদী বহন করতে পারবো না।
খোঁজ নিয়ে গেছে, রোহিঙ্গারা আসার পর থেকে পেছনের সারিতে থাকা স্থানীয় এনজিও গুলোও এখন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হয়ে গেছে। এসব এনজিও বিদেশি ডোনার এজেন্সির পরিকল্পনা ও দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করতে গিয়ে অনেক সময় দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে। তারাও বিদেশি এনজিও গুলোর মত রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরত না যাওয়ার বিষয়ে প্রলুব্ধ করছে।
আবার রোহিঙ্গাদের কেন্দ্র করে এমনও এনজিও সংস্থার আবির্ভাব হয়েছে, যেগুলোর আগে নাম পর্যন্ত শোনেনি কেউই। এসব হাই হাই এনজিও গুলোর কার্যক্রম সবচেয়ে আপত্তিজনক।
সম্প্রতি শূরা নামে একটি অদৃশ্য সংস্থার কর্মকান্ড দেখা গেছে রোহিঙ্গা শিবিরে। তারা সরাসরি রোহিঙ্গা শিবিরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নগদ টাকা বিতরণ করে। এবং বিভিন্ন উগ্রবাদ মূলক পরামর্শ দেয়।
ক্যাম্প-৬ এর কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা জানান, কোরবানের ঈদের আগের সপ্তাহে হঠাৎ একটি নোয়া নিয়ে ক্যাম্পে প্রবেশ করে ৬ জন মৌলভী। তারা গাড়ি থেকে মেনেই ৬জন ৬দিকে চলে যায়। এরপর প্রতিটি বাড়িতে নগদ টাকা বিতরণ করে। টাকা দেওয়া শেষে কয়েকজন রোহিঙ্গাকে জড়ো করে বিভিন্ন কথা বলেন। এসময় তারা নিজেদেরকে ‘শূরা’ নামে একটি এনজিও সংস্থার কর্মকর্তা বলে দাবী করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন ‘অবস্থা সম্পন্ন’ এনজিও সংস্থার স্টিকার ব্যবহার করে গাড়ি নিয়ে শূরার কর্মীরা রোহিঙ্গা শিবিরে প্রবেশ করে। এরপর শিবিরে ঢুকে নগদ টাকা বিতরণ করে। ক্যাম্পে যাওয়ার সময় চেকপোষ্টের ব্যবস্থা না থাকার সুযোগে এই অপতৎপরতা চালাতে সুযোগ পাচ্ছে তারা। শূরার মত অপতৎপরতা চালাচ্ছে আরও কয়েকটি এনজিও সংস্থা।
রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি অপতৎপরতা চালাচ্ছে এসকেবি (স্মল কাইন্ডনেস অব বাংলাদেশ) নামে একটি এনজিও সংস্থা। এই সংস্থার প্রত্যেকেই শিবিরের সাবেক এবং বর্তমান দায়িত্বশীল। বর্তমানে এই সংস্থার নেতৃত্ব দেয় চট্টগ্রামের সাবেক এক শিবির নেতা। এটি সম্প্রতি এনজিও ব্যুরো থেকে বাতিল হওয়া ৪১ টি সংস্থার মধ্যে একটি। সম্প্রতি প্রশাসনের অগোচরে রোহিঙ্গা শিবিরে এক হাজার গরু বিতরণ করেছে সংস্থাটি।
সম্প্রতি গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে ৪১টি এনজিওর কার্যক্রমে আপত্তি দিয়ে এনজিও ব্যুরোতে চিঠি পাঠায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে ৪১ এনজিওকে রোহিঙ্গা শিবিরে কার্যক্রম চালানোর ওপর নিষিদ্ধ করে এনজিও ব্যুরো।
একটি সূত্রে জানা গেছে, এসব এনজিও বাতিলের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ রোহিঙ্গা শিবিরে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালানোর চেয়ে অপতৎপরতা চালানোর অভিযোগ।
জানা গেছে, এনজিওতে যেসব বিদেশিরা কাজ করে, তাদের বেশির ভাগেরই জব ভিসা নেই। তারা ভ্রমণ ভিসায় এসে চাকরি করছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পাকড়াও থেকে বাঁচার জন্য প্রতি ৪৫ দিন পর আশপাশের বিভিন্ন দেশ থেকে ঘুরে আসে তারা। যেমন- মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, নেপাল ইত্যাদি। এরফলে তারা সহজেই সরকারের আইন প্রয়োগকারি সংস্থার চোখে ধুলো দিয়ে যাচ্ছে।

পাঠকের মতামত: